ব্রিটিশরা তাকে খান সাহেব ও খান বাহাদুর দুটি উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

 

ব্রিটিশরা তাকে খান সাহেব ও খান বাহাদুর দুটি উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

তার একটি উপন্যাস আব্দুল্লাহ বাংলাদেশে অনেক আগের পাঠ্যক্রমে পড়ানো হতো।
বলা হয়, ১৯১৮ সালের দিকে এই উপন্যাসটি তিনি রচনা শুরু করেছিলেন।

আব্দুল্লাহ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আব্দুল্লাহ।


ছবিতে সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হককে দেখতে পাচ্ছেন।




যে শিক্ষিত, প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন একজন ব্যক্তি।
ঐ সময় মুসলিম সমাজের কেউ কেউ হিন্দুদের সহায়তা করে উপরে তুলেছে,
এটা সে পছন্দ করতো না।
সে চাইতো মুসলমানরা ব্রিটিশ শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করে তার মত প্রগতিশীল হোক।
অর্থাৎ হিন্দুপ্রেমীদের বিপরীতে গিয়ে সে ব্রিটিশদের গ্রহণ করতে চাইতো।
অথচ বাস্তবতা হলো, হিন্দুদের এ অঞ্চলে উপরে তুলেছেই ব্রিটিশরা।
তার কাছে অপশন দুইটি- হয় হিন্দুপ্রেমী নয়ত ব্রিটিশ।
অথচ এই দুইটি অপশন ব্যতিত মুসলমানরা নিজস্ব প্রাচুর্যময় সংস্কৃতি ও ভাবধায়ায় ফিরে যেতে পারতো। কিন্তু সে দিকে সে দৃষ্টি দেয়নি, বরং বর্জন করেছে।

বর্তমান কালে ঘটনাগুলো আমার কাছে একই রকম মনে হয়।

আমাদের সামনে দুটি অপশনেই হাজির করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে একদিকে ভারত ও ভারত প্রেমী হাসিনা অপরদিকে আমেরিকা ও ইউনুস।
মনে হচ্ছে, এই দুই অপশন ব্যতিত আর কোন অপশন নেই।
বলা হচ্ছে- ভারত থেকে আমেরিকা ভালো।
“ইউনুস আমেরিকাপন্থী তো কী হয়েছে, আমরা ভারত ও তার দোসর থেকে তো বাচলাম।”
অথচ, সম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরা যেমন এ অঞ্চলের হিন্দুদের উপরে তুলেছে,
তেমনি আমেরিকা এ অঞ্চলে হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিষ্ঠা করেছে।
ভারতকে আমেরিকা আঞ্চলিক অংশীদার বা ঠিকাদার হিসেবে ঘোষণা করেছে।
তার মুসলিম নির্যাতনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তাই ভারতকে যদি ঘৃণা করতে হয়, তবে ভারতের পেছনে যে আমেরিকা আছে,
তাকে তো আরো আগে ঘৃণা করা উচিত।
কিন্তু আমাদের বোকা বানিয়ে ভারতকে বিপরীতে দাড় করিয়ে আমেরিকাকে গ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে-

ভারত+হাসিনা’র বিপরীতে আমেরিকা+ইউনুস ছাড়া আমাদের আর বিকল্প নাই।

কিন্তু ভারতের হাত থেকে বাচতে আমাদের আমেরিকার পেটেই ঢুকতে হবে কেন ?
লক্ষ্য করলে দেখবেন, ঐ সময় ব্রিটিশদের থেকে খান সাহেব ও খান বাহাদুর উপাধিপ্রাপ্ত ইমদাদুল হকরা যেমন হিন্দুদের বিপরীতে ব্রিটিশ গ্রহণ করার ন্যারেটিভ ছড়িয়েছিলো,
এখন যারা ভারতের বিপরীতে আমেরিকা গ্রহণ করতে হবে, এই ন্যারেটিভ তৈরী করে দিচ্ছে, তারাও হয়ত আমেরিকা থেকে কোনভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত। কেউ জানে, কেউ জানেনা।
আমার কথা হচ্ছে,
ভারতের বিপরীতে গিয়ে যদি আমাকে আমেরিকার পেটেই ঢুকতে হয়,
তবে জাতি হিসেবে আমাদের স্বকীয়তা থাকলো কোথায় ? স্বাধীনতা থাকলো কোথায় ??
১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসন আমাদের সব-কিছুকে যেভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে,
নতুন করে যে আমরা আমেরিকার পেটে ঢুকছি, আদৌ কী খুব সহজে বের হতে পারবো ?
হয়ত বলতে পারেন, তাহলে দুই জনের বিকল্প কে ? স্বকীয়কতা আপনি ঠিক করে দিন।
অবশ্যই আছে। বাঙালী বলেন আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান বলেন,
তাদের সংষ্কৃতি প্রাচুর্যময়, খুজলে নেতৃত্ব নেয়ার মতও বহু যোগ্য দেশপ্রেমী লোক পাওয়া যাবে।
কিন্তু এখানে যে আরো অপশন আছে, সেটা তো আপনাকে জানতে হবে।
তাছাড়া এখন ট্রানজিশন পিরিয়ড।
হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন থেকে বের হয়ে, আমাদের নতুন কোন স্থানে প্রবেশের সুযোগ আছে।
এখনই তো আলোচনার উত্তম সময়। কিন্তু নিজস্ব চিন্তার সুযোগ তো দিতে হবে।
কিন্তু সেটা না দিয়ে যদি আপনাকে একপক্ষের বিপরীতে গেলে আরেকপক্ষে দালাল বলে ট্যাগ দেয়া হয়, তবে তো আপনি সুযোগ পাবেন না। আর ঐ দুইপক্ষ আপনাকে সে সুযোগ দিতেও চাইবে না। তাদের মধ্যেই আপনাকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইবে।
গোয়েবলস কায়দায় আপনার মস্তিষ্ক থেকে স্বকীয় হওয়ার সুযোগটাই ডিলিট করে দিবে।

No comments

Powered by Blogger.